
আজম আলী
সম্পাদক, বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি
সোসাইটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দ,
আস-সালামু আলাইকুম। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ-এর নবনির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনারা ইতোমধ্যে অবগত আছেন, গত ৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে ১২ সদস্যের নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হয়েছে এবং পরদিন, ৮ এপ্রিল দায়িত্ব হস্তান্তর সম্পন্ন হয়। আপনাদের আস্থায় সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রিয় সদস্যবৃন্দ,
আপনারা আরও অবগত আছেন যে, আমাদের সোসাইটি ২৩ এপ্রিল ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন প্রাপ্ত হয়ে ২ মে ২০০৫ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ সময় ধরে সোসাইটি দেশব্যাপী ২৭টি শাখা, ১৯৬ জন জনবল এবং প্রায় ৮.৫ লক্ষ সদস্য নিয়ে এক সুপরিচিত ও সফল সমবায় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। ২০১১-১২ অর্থবছরে সোসাইটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত শেয়ার মূলধন যথাক্রমে ১,৪০০ কোটি এবং ১,৩৮১.১৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। যখন সোসাইটিকে একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছিল, ঠিক সেই সময় সোসাইটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে সোসাইটির অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়েরকৃত মানি লন্ডারিং মামলার কারণে সোসাইটির কার্যক্রমে এক অভূতপূর্ব অচলাবস্থা দেখা দেয়। ফলস্বরূপ, সোসাইটির তৎকালীন ৩য় ব্যবস্থাপনা কমিটিতে কো-অপ্ট করে সদস্য নিয়ে দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। অতঃপর ২০১৫ সালে উক্ত কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক ১ম অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হয়। দিন পেরিয়ে মাস, মাস পেরিয়ে বছর। এক-এক করে ৮টি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হলেও দুর্ভাগ্যবশত মামলা ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে কোনো কমিটির পক্ষেই নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
সদস্য ভাই ও বোনেরা,
অবশেষে, প্রায় ৮.৫ লক্ষ সদস্যের স্বার্থ বিবেচনায় সোসাইটির দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা, বিনিয়োগকারীদের আমানত সুরক্ষা ও সম্পদের সুষম বন্টনের মাধ্যমে তাদের ভাগ্য উন্নয়ন ও ন্যায্য পাওনা বিতরণকল্পে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে দুদক সমবায় অধিদপ্তরকে অনুরোধ জানিয়ে পত্র দেয়। অধিদপ্তর কর্তৃক গঠিত ৯ম অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে সমবায় সমিতি আইন, বিধিমালা ও সোসাইটির নিজস্ব উপ-আইন অনুসরণপূর্বক সরকারী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে সঠিক ও আইনানুগভাবে একটি সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে ২৮ জুন ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত হয় ৪র্থ নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি (২০২১-২০২৪)। ততক্ষণে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অত্র সোসাইটি ১৬ বছরে পদার্পণ করে। ২৯ জুন ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ৯ম অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক ৪র্থ ব্যবস্থাপনা কমিটির নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে সোসাইটির দায়িত্বভার হস্তান্তর করা হয়। উক্ত নির্বাচিত কমিটি সোসাইটির সর্বশেষ অডিটের পর থেকে আয়-ব্যয় ও সম্পদ-সম্পত্তির যথাযথ হিসাব গ্রহণ ছাড়াই এবং তা বুঝে না পেয়ে কেবলমাত্র কাগজে-কলমে সোসাইটির দায়িত্বভার গ্রহণ করে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কমিটি সোসাইটির দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা ও সদস্যদের স্বার্থ রক্ষায় দুরূহ পরিস্থিতির মধ্যেও সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। আইনি জটিলতা ও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে ৪র্থ ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষে ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অডিট ও বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। কমিটির মেয়াদ শেষ হলে সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক ১৮ জুলাই ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে ৭-সদস্য বিশিষ্ট ১০ম অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত অন্তর্বর্তী কমিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে ৫-সদস্য বিশিষ্ট ১১তম অন্তর্বর্তী কমিটি গঠিত হয়। সর্বশেষ, গত ৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে ১২-সদস্য বিশিষ্ট নবনির্বাচিত ৫ম ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হয় এবং ৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে কমিটির নিকট দায়িত্বভার হস্তান্তর করা হয়। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, বর্তমান কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সোসাইটির দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা নিরসনে সোসাইটির অফিসে দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করেছে।
সোসাইটির ধৈর্যশীল সভ্যগণ,
এ পর্যায়ে আমি সোসাইটির মামলার ব্যাপারে কিছু বিষয় স্পষ্ট করতে চাই। আপনারা জানেন, ২০১২ সালে দুদকের দায়েরকৃত মামলায় (রাজধানীর কলাবাগান থানার মামলা নং ৩৩, তারিখঃ ৩১/০৭/২০২১ খ্রিঃ) দীর্ঘ ১০ বছর পর ২০২২ সালের ১২ মে বিজ্ঞ বিচারিক আদালত কর্তৃক রায় প্রদান করা হয়। রায় প্রদানের পূর্বেই সোসাইটির সাড়ে ৮ লক্ষাধিক সদস্যের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমি নিম্ন-স্বাক্ষরকারী (তৎকালীন কমিটির সম্পাদক) ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে ক্রোককৃত সম্পত্তির অবমুক্তির জন্য বিচারিক আদালতে আবেদন করি। তৎকালীন কমিটির সম্মানিত সভাপতি উক্ত মামলায় চার্জশীট ভুক্ত আসামী থাকায় ২ মার্চ ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত শুনানিতে সমিতির পক্ষের আবেদনে দুদক আপত্তি জানায়। ফলে আদালত আবেদনটি আমলে নেন নি। পরবর্তীতে, ১২ মে ২০২২ তারিখে বিচারিক আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সোসাইটির বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকা সত্ত্বেও অবসায়নের আদেশ প্রদান করা হয়। ফলে, ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমি সোসাইটির অবসায়নরোধে এবং ক্রোককৃত সকল সম্পদ-সম্পত্তি ও অবরূদ্ধ সকল ব্যাংক হিসাবসমূহ অবমুক্তির জন্য হাইকোর্ট ডিভিশনে সোসাইটির পক্ষে আপিল করি। হাইকোর্টে আমাদের মামলা নং ক্রিমিনাল আপিল ৫৮১৫/২০২২। হাইকোর্টের মামলায় শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ ১৪ আগস্ট ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে আমাদের আপিল মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালতের আদেশ তথা সোসাইটির অবসায়নের আদেশটি স্থগিত করে। পরবর্তীতে দুদক চেম্বার জজ কোর্ট তথা আপিল বিভাগে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে পুনরায় আপিল করে। দুদকের মামলা নং ক্রিমিনাল পিটিশন ১২৯৮/২০২২। মাননীয় চেম্বার জজ আদালত এবং পরবর্তীতে আপিল বিভাগ মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্ট প্রদত্ত আদেশটি স্থগিত করে এবং বিশেষত দুই মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য পুনরায় হাইকোর্টে প্রেরণ করে। শুনানিতে সোসাইটির আইনজীবী আমার সাথে আলোচনা না করে মামলাটি হাইকোর্টের অন্য একজন বিচারপতির নিকট প্রেরণের জন্য আবেদন করেন। সর্বশেষ উক্ত আদালত সোসাইটির আইনজীবী কর্তৃক সোসাইটির সম্পাদকের (বাদীর) পক্ষে যথাযথ নথি প্রদর্শন না করানোর দায়ে ৬ মে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রদত্ত রায়ে অযৌক্তিকভাবে সোসাইটির অবসায়নের আদেশটি বহাল রাখে। অথচ, উচ্চ আদালতের পুর্বের দ্বৈত বিচারপতির বেঞ্চে সকল নথি যথাযথভাবে সাবমিট করার কারণে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি গ্রহণ করে সোসাইটির পক্ষে স্টে অর্ডার প্রদান করেছিলেন। এরপর, সেপ্টেম্বর ২০২৪ এ তৎকালীন অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক, আমি (৫৮১৫/২০২২ মামলার বাদী) সোসাইটির পক্ষে হাইকোর্টের সর্বশেষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে মামলা করি। মামলা নং ক্রিমিনাল পিটিশন ১৫৩২/২০২৪। ১ অক্টোবর ২০২৪ এ আপিল বিভাগে মামলাটির প্রথম শুনানি হয় এবং বর্তমানে মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। এমতাবস্থায়, যেহেতু নতুন নিয়মিত কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, ফলে আমরা দ্রুততম সময়ে আপিল বিভাগে বিচারাধীন ১৫৩২/২০২৪ মামলাটির শুনানি করিয়ে সমিতির পক্ষে চূড়ান্ত রায় নিয়ে আসার ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী। মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির মাধ্যমে সোসাইটির অবরুদ্ধ সম্পদ-সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাবসমূহ পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ফলে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধৈর্য ধারণের জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, আমরা অতি দ্রুত সোসাইটির অডিট সম্পন্ন করে দায়-দেনা নির্ধারণ এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরিকল্পনা করছি। একইসঙ্গে, পূর্বের রেকর্ডপত্র ও তথ্যাদি সংরক্ষণের জন্য ইআরপি সার্ভার পুনরায় চালু কিংবা আরও উন্নত, নিরাপদ ও টেকসই তথ্য প্রযুক্তি কাঠামো গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
সদস্য ভাই ও বোনেরা,
এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। আমরা আশাবাদী, মহান আল্লাহ্র অশেষ রহমতে অচিরেই সোসাইটিকে একটি লাভজনক, স্বচ্ছ এবং জনমুখী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে সক্ষম হবো। আল্লাহ্ আমাদের সকলের সহায় হোন। সবার প্রতি শুভ কামনা রইল।